খুলনা | শুক্রবার | ০৩ মে ২০২৪ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনায় অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিলে বিড়ম্বনা, সরবরাহে নানা প্রতিবন্ধকতা

এন আই রকি |
১২:৩৬ এ.এম | ১৮ জুলাই ২০২১

খুলনায় মেডিকেল অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিলে নানাবিধ জটিলতার কারণে বিড়ম্বনায় পড়ছেন করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানকারী স্বেচ্ছাসেবকরা। ফলে রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ করতে প্রতিনিয়ত নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এক ডজন স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠান। 
জানা যায়, একই পরিমাণ (১.৪০ কিউবিক মিটার) একটি মেডিকেল সিলিন্ডার রিফিল করতে ১২০ টাকা থেকে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে, রয়েছে সিলিন্ডারের পেশারেও গড়মিল। এরপরও চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন দিতে ব্যর্থ হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। এমন কি খুলনায় তিনটি সংস্থার নিজস্ব মেডিকেল সিলিন্ডারে অক্সিজেন রিফিলে অগ্রাধিকার দেওয়ারও অভিযোগ মিলেছে। তবে বেসরকারি সংস্থাগুলোর দাবি, প্রকৃতপক্ষে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তারা বিপদে পড়েছে। মূল্য কোম্পানিগুলোর নিয়ম অনুযায়ী নেওয়া হচ্ছে। 
জানা যায়, করোনার প্রকট বেড়ে যাওয়ায় খুলনার হাসপাতালগুলোতে ব্যাপক পরিমাণে অক্সিজেন সংকটের সৃষ্টি হয়। এ সময় ব্যক্তি ও সংগঠনের ব্যানারে ফ্রি অক্সিজেন সেবা শুরু করে খুলনার অনন্ত এক ডজন স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু চাহিদা তুলনায় অক্সিজেন না পাওয়ায় তারা বাড়িতে গিয়ে করোনা রোগীদেও সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই অবিলম্বে প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন দেওয়ার দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানগুলো।
খুলনায় ফ্রি অক্সিজেন সেবা দিচ্ছেন তাদের মধ্যে উলে­খযোগ্য শেখ আবু নাসের ও শেখ সোহেল অক্সিজেন ব্যাংক, নগর বিএনপি’র কল সেন্টার, খুলনা অক্সিজেন ব্যাংক, নগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন অক্সিজেন সেবা, আল কারীম অক্সিজেন সেবা, বিএনপি নেতা বকুলের করোনা সাপোর্ট সেন্টার, রোটারী খুলনা অক্সিজেন ব্যাংক, উদীয়মান অক্সিজেন ব্যাংক, নগর পূজা পরিষদের অক্সিজেন ব্যাংক, টিম খুলনা বিল্ড খুলনা, আলো ফুটবেই, আড়ংঘাটা অক্সিজেন ব্যাংক, দিশারী অক্সিজেন সেবা, বেগম রাজিয়া নসের অক্সিজেন সেবা প্রমুখ।
তবে স¤প্রতি চাহিদার তুলনায় খুলনার বেসরকারি অক্সিজেন রিফিলকারী তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে সিলিন্ডার রিফিলে নানান রকম অভিযোগ মেলে। স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কথা বলে জানা যায় তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে করোনা রোগীদের সেবা প্রদানকারী ফ্রি অক্সিজেন ব্যাংক নামের এ প্রতিষ্ঠানগুলো। বর্তমানে খুলনায় বেসরকারিভাবে মেডিকেল সিলিন্ডার রিফিলের কাজ করছেন খুলনা অক্সিজেন লিমিটেড, কানেক্ট ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড (লিন্ডে) এবং স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ হচ্ছে তারা তাদের নিজস্ব সিলিন্ডারগুলোতে কম টাকা এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রিফিল করে। 
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, খুলনা অক্সিজেন লিমিটেড তাদের নিজস্ব একটি মেডিকেল অক্সিজেন সিলিন্ডার (১.৪০ কিউবিক মিটার) রিফিল করতে ২৫০ টাকা নেয়। অথচ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে রিফিল করতে নেয় ৩শ’ টাকা। পাশাপাশি সিলিন্ডারের পেশার ২ হাজার থাকার কথা থাকলে দেওয়া হয় ১৫ থেকে ১৬শ’। এছাড়া সপ্তাহে অনন্ত দু’দিন এখান থেকে সিলিন্ডার রিফিল বন্ধ থাকে। 
কানেক্ট ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের (লিন্ডে) একটি মেডিকেল অক্সিজেন সিলিন্ডার (১.৪০ কিউবিক মিটার) রিফিল করতে নেয় ২৩১ টাকা। এদের পেশার ২ হাজার থাকে। তবে সমস্যা হচ্ছে তারা নিজেদের সিলিন্ডার ছাড়া অন্য কোন অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল অথবা একচেঞ্জ করেন না। এদিকে স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড একই মাপের সিলিন্ডার রিফিলে নেয় মাত্র ১২০ টাকা। এদের পেশার ২ হাজার থাকে। এখানে সমস্যা হচ্ছে এরাও নিজেদের সিলিন্ডার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একচেঞ্জ করে। এরপর অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠানগুলোর একচেঞ্জ করে। 
তবে একাধিক স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠান জানায়, কম মূল ও পেশার সঠিক রেখে তারা সেবা দিলেও যদি ৫টি সিলিন্ডার নেওয়া হয় মাত্র ১টি সিলিন্ডার রিফিল করে। অন্যগুলো যশোর থেকে রিফিল করে এনে পরের দিন ডেলিভারী দেয়। অনেক সময় অনেক প্রতিষ্ঠানদের সিলিন্ডারের মান ভাল ৮/৯ বলেও ফেরত দেওয়া হয়। 
খুলনা অক্সিজেন লিমিটেডের ব্যবস্থাপক সিরাজুল ইসলাম জানান, করোনায় চাপ বেড়ে যাওয়ায় সপ্তাহে ২/৩ দিন আমরা অক্সিজেন রিফিল করতে পারি না। তাছাড়া বাইরের সিলিন্ডার রিফিলে ৫০ টাকা বেশি নেওয়া হয়। সিলিন্ডারের পেশারের বিষয়ে তিনি বলেন, খুলনা থেকে যে সকল সিলিন্ডারের মাধ্যমে রিফিল করা হয় তাতে করে পেশার ২ হাজার দেওয়া সম্ভব নয়। 
কানেক্ট ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের (লিন্ডে) ডিপো ইনচার্জ মোঃ সরোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের সিলিন্ডার রূপগঞ্জ থেকে রিফিল হয়ে আসে। এখানে আমাদের নিজস্ব গ্রাহকদের সিলিন্ডার একচেঞ্জ করে দেওয়া হয়। অন্যদের সাথে একচেঞ্জ করার কোন সুযোগ আমাদের নেই।
স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেডের খুলনার ডিস্ট্রিবিউশন অফিসার সজীব রায়হান জানান, আমাদের চাহিদা ১৫ থেকে ১৬ গুণ বেড়ে গেছে। যশোর থেকে সিলিন্ডার রিফিল করে খুলনায় নামাতেই সব শেষ হয়ে যায়। যাদের অনেক বেশি জরুরি তাদের ১/২টা দেই। বাকিগুলো যশোর থেকে রিফিল করে পরের দিন দেই। অনেক স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠানকে অক্সিজেন রিফিল না করে দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, স¤প্রতি আমরা ৩০টি সিলিন্ডার ঢাকায় হাইড্রোলিক টেস্টে পাঠিয়েছিলাম। সবগুলোই রিজেক্ট হয়ে গেছে। তাই যাদের সিলিন্ডারের মান ভাল নয় বলে হয় তাদের রিফিল না করে ফেরত দিয়ে দেই।

প্রিন্ট

আরও খবর